প্যারিস: সাড়ে পাঁচ বছর আগের সে রক্তাক্ত দিনটি ভোলার নয়। ভুলতে চান-ও না ওঁরা। সে কারণেই মঙ্গলবার ফরাসি ব্যঙ্গচিত্র পত্রিকা 'শার্লি এবদো'-র ঘোষণা, হজরত মহম্মদের বিতর্কিত কার্টুন ফের ছাপবে তারা। এই বিতর্কিত কার্টুনের জেরে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে চরমপন্থী ইসলামি বন্দুকবাজদের হানা চলেছিল প্যারিসে শার্লি এবদো-র দপ্তরে। মারা গিয়েছিলেন ফ্রান্সের বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট-সহ ১২ জন। আজ, বুধবার সেই হামলায় জড়িত অভিযোগে ১৪ জনের শুনানি শুরু হতে চলেছে। তার ঠিক আগের দিনই এহেন ঘোষণা ওই ফরাসি পত্রিকার।
2020 ফ্রান্সের প্যারিসে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি করার পর ই শিক্ষককে গলা!
2020 মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি: যবিপ্রবি শিক্ষার্থী কারাগারে
2020 গেলো সপ্তাহে, সুইডেনে পবিত্র কুরআন শরিফকে অসম্মান করা হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় মুসলিম দেশগুলো।
পত্রিকার নতুনতম সংস্করণের সম্পাদকীয়তেই এর কারণ ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন শার্লি এবদো-র ডিরেক্টর লরাঁ সুরিসো। স্পষ্ট ভাষায় লেখা, 'আমরা মাথা নোয়াবো না। আমরা হাল ছাড়ব না।' সঙ্গে প্রথম পাতার শিরোনাম, 'অল অফ দিস, জাস্ট ফর দ্যাট।' পত্রিকার সম্পাদকীয় গোষ্ঠীর মতে, এটিই ওই কার্টুন পুনর্মুদ্রণের উপযুক্ত সময়। তাদের মতে, ২০১৫ সালের ওই ভয়ঙ্কর হামলার পর কিছু পর থেকেই ফের হজরত মহম্মদের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের আর্জি জমা পড়তে থাকে পত্রিকার দপ্তরে। কিন্তু তখন রাজি হননি তাঁরা। শার্লি এবদো-র সম্পাদকীয় গোষ্ঠীর বক্তব্য, 'আমরা সে সময় এমন সমস্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। তার কারণ অবশ্য এটা ছিল না যে, বিষয়টি নিষিদ্ধ। আসলে আমরা এমন অর্থপূর্ণ উপলক্ষের অপেক্ষায় ছিলাম যার উপর ভিত্তি করে ফের শুরু করা যায় বিষয়টি। এমন কিছু যা নতুন আলোচনা-পর্যালোচনার পরিসর তৈরি করবে।'
2015 যুক্তরাষ্ট্রে মহানবীর ব্যঙ্গ কার্টুন প্রদর্শনীর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ৴:
আল্লাহদ্রোহী শক্তি ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটভিত্তিক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে -পীর সাহেব চরমোনাই
2014 ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সংখ্যালঘু নির্যাতনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা ও কুড়িগ্রামে দুটি মামলা করা হয়েছে। দুটি মামলার ক্ষেত্রেই প্রথম আলোর সম্পাদককে একই দিন ৯ নভেম্বর আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
২০১৩ সালের ১১ মার্চ ‘রস আলোতে’ পবিত্র কোরআনের সূরা লোকমানের ২৭ আয়াতের বিকৃতি ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া গত জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের সময় প্রথম আলোতে নারী ভোটারদের সিঁদুর পরিয়ে সাজানো ছবি প্রকাশ করারও অভিযোগ আনা হয়েছে
২০০৬ সালে ব্যঙ্গাত্মক ওই কার্টুন প্রথম প্রকাশ হয় ড্যানিশ পত্রিকা জিল্যান্ডস পোস্টেনে। তখনও বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করেন মুসলমানরা।
২০০৭ সালে প্রথম আলোর ‘আলপিন’ এ মহানবীকে (সা.) নিয়ে ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশ, দুটি মামলা
৴
ফ্রান্সে আজ ধর্মিয় অনুভূতির আঘাতের অভিযোগ শিক্ষক খুন।
কার্টুন আঁকা নিয়ে বিতর্ক পুরনো। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অনৈসলামিক ও কাপুরুষোচিত৷ আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে কখনো এমন প্রতিশোধমূলক কোনো ব্যবস্থায় সায় দেননি৷ ছোটবেলায় পড়া সেই গল্পের উদাহরণ টানতে চাই এখানে।
‘মহানবী যে পথ দিয়ে চলাচল করতেন, এক বিধর্মী দুষ্টু বুড়ি সেই পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত এবং নবীজীর পায়ে কাঁটা ফুটে ব্যথা পেলে দূরে বসা বুড়ি খিলখিল করে আনন্দে হেসে উঠত। প্রতিদিন নবীজী পায়ে ব্যথা পেলেও বুড়িকে কিছুই বলতেন না। একদিন নবীজী দেখেন পথে কাঁটা নেই এবং এদিক-ওদিক তাকিয়ে বুড়িকেও দেখতে পান না। নবীজীর মনে সন্দেহ হলে উনি খুঁজতে খুঁজতে বুড়ির বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন এবং দেখলেন বুড়ি অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। বুড়ি তো নবীজীকে দেখে সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেল। ভাবল, এবার তার অপকর্মের শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু নবীজী কাঁটা বিছানোর কোনো কথা না তুলে তার সেবা-শুশ্রূষা করে তাকে সুস্থ করে তুললেন। মহানবীর এই মহানুভবতায় বুড়ি মুগ্ধ হলো এবং তার অপকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে মাপ চাইল।’
মহানবী নিজে এরকম দীনের পথে চলতে গিয়ে হাজারও বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন প্রচণ্ড হিংসাত্মক অবস্থার মোকাবিলা করেছিলেন। অনেক উপহাস, ব্যঙ্গ, চিদ্রূপ ও ঠাট্টা-মশকরার মুখোমুখি হয়েছিলেন কিন্তু তার বদলে কারও ওপরেই উনি কখনোই কর্কশ বা রূঢ় হননি। এমনকি প্রতিশোধমূলক বলপ্রয়োগও করেননি কখনো। এটাই হলো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ এবং প্রতিটি মুসলমানের সেই মহান আদর্শকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা উচিত নয় কি?